দেশি মাগুর একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সুস্বাদু মাছ। রোগীর পথ্য হিসাবে মাছটির চাহিদা রয়েছে অনেক। এক সময় দেশে এই মাছটিকে সহজেই প্রাকৃতিক জলাশয়ে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন দেশি মাগুর আর তেমন পাওয়া যায় না। তাই মাছটি প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল। তবে আশার কথা হল দেশের মাছ চাষিরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এই মাছটিকে ফিরিয়ে এনেছে। ১৯৯৭ সালের শেষ দিকের কথা। ইচ্ছা হল দেশি মাগুরের পোনা উৎপাদন করব। বিভিন্ন হাওর-বাঁওড় থেকে হাজার তিনেক দেশি মাগুর সংগ্রহ করলাম। শুনেছিলাম দেশি মাগুর মাছ পুকুরে থাকে না। বর্ষাকালে পুকুর থেকে উঠে যায়। তাই ৫ শতাংশ জায়গায় চারদিকে মজবুত দেয়াল দিয়ে পাকা পুকুর তৈরি করলাম। সেখানে ব্রুড মাগুর মাছ রাখা হল। বদ্ধ জায়গায় মাছগুলো এক সময় না খেয়ে মারা যেতে লাগল। এ থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম মাছগুলোকে এখন থেকে পুকুরে রাখব। তখনি মাছগুলো পুকুরে মজুত শুরু করলাম। সেখানেও মাছ মারা যেতে লাগল। তার পরেও আমি দমে যায়নি। আবারো নতুন করে মাছ কেনা শুরু করলাম। এবার বিভিন্ন হাওর-বাঁওড় থেকে মাগুর মাছ কিনে ২ ফুট পানিতে মজুত করতে থাকি। অনবরত পুকুরে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করি। একদিকে পানি ঢুকে আর অন্য দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। পানির স্রোতের সৃষ্টি হল। সেই স্রোতে মাগুর যেন প্রাণ ফিরে পেল। মাছের মৃত্যুহারও অনেক কমে গেল। প্রযুক্তি পেয়ে গেলাম। অবশ্য এই প্রযুক্তিটি অর্থাৎ অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে পাবদা, শিং, কৈ মাছ প্রজননের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পেরেছি। এভাবে মাগুর মাছের মজুদ শেষ করে কোনোভাবেই কৃত্রিম খাবারে অভ্যস্ত করতে পারছিলাম না। খাবার না খাওয়ার ফলে পানি নষ্ট হতেই বারবার পানি পরিবর্তন করতে থাকি। অবশেষে ছোটবেলায় বড়শি দিয়ে মাছ ধরার কথা মনে হল। ছোট বেলায় বড়শিতে চিংড়ির টোপ ব্যবহার করে মাগুর মাছ ধরতাম। সেই মোতাবেক কিছু কাঁচা চিংড়ি একটা ছোট ট্রেতে দিয়ে পুকুরে রাখি। ২দিন পর উঠিয়ে দেখি মাগুর মাছ তা খায়নি। আবার বাজার থেকে কাঁচা চিংড়ি এনে ট্রেতে করে পুকুরে রাখি। দু দিন পর আবারো পরীক্ষা করে দেখি চিংড়ি মাছ খেল কিনা। এবার মনে হল কিছু চিংড়ি খেয়েছে। এভাবে কয়েকবার পুরানো চিংড়ি বদলে নতুন চিংড়ি দেয়াতে খেতে শুরু করল মাগুর মাছ। এরপর শুরু করি আরেক কৌশল। একদিন পর পর বাজার থেকে চিংড়ি এনে পুকুরে দিতে থাকি। মাগুর মাছও খেতে থাকে। কিন্তু এত কাঁচা চিংড়ি যোগান দেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। সিদ্ধান্ত নেই যেভাবেই হোক মাগুর মাছকে স্বাভাবিক খাবারে অভ্যস্ত করাতে হবে। তাই কাঁচা চিংড়ির সাথে শুকনো চিংড়ি দেয়া হল, তাও খেল। তারপর দেয়া হল শুকনো চিংড়ি, তাও খেল। এরপর শুকনো চিংড়ির পাউডারের সাথে অল্প পরিমাণে খইল, ভূষি দিয়ে মিশ্রণ করে ছোট ছোট বল বানিয়ে দেয়া হলে তাতেও অভ্যস্ত হয়ে গেল। এভাবে হাওর-বাঁওড়ের দেশি মাগুরকে স্বাভাবিক খাবারে অভ্যস্ত করা হল। এর কিছুদিন পরেই মাছগুলো বড় হলে পেট ভরে গেল ডিমে।
প্রজননক্ষম ব্রুড মাছ মজুত ও নির্বাচন :
প্রতি শতাংশে ৫০/১০০ টি দেশি মাগুর মজুত করতে হবে। দেশি মাগুর এক বছরেই প্রজননক্ষম হয়ে থাকে। প্রজননের সময় পুরুষ ও স্ত্রী মাগুর মাছকে সহজেই সনাক্ত করা যায়। স্ত্রী মাগুর মাছ একটু কালচে বর্ণের হয় এবং প্রজনন মৌসুমে পেট ভর্তি ডিম থাকে। পুরুষ মাছের পেট স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে এবং পুরুষ মাগুর মাছের রং হালকা বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে। প্রজননের জন্য সুস্থ সবল পেট ভর্তি ডিম দেখে স্ত্রী মাছ নির্বাচন করতে হবে। ভাল ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকেই মাগুর মাছ প্রজনন করানো যায়।
হরমোন প্রয়োগ:
মাগুর মাছকে ২টি হরমোন দিয়ে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ডিম সংগ্রহ করা যায়। পিটুইটারি গ্যান্ট বা পিজি দিয়ে আর এইচ.সি.জি. দিয়ে। পি.জি. দিয়ে আবার ২টি পদ্ধতিতে ডিম সংগ্রহ করা যায়। একটি মাত্র ডোজ দিয়ে ডিম সংগ্রহ করা যায় আবার ২টি ডোজ দিয়েও ডিম সংগ্রহ করা যায়। মাগুরের ডিম সংগ্রহের জন্য হরমোন ইঞ্জেকশনের চেয়ে মাছের পরিপক্কতার উপর বেশি নজর দেয়া উচিৎ। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে মাগুর মাছের ডিম পরিপক্ক থাকলে প্রতি কেজিতে ১৫ মিঃ গ্রাঃ পিজি দিয়েই ডিম সংগ্রহ করা যায় আবার একই মাছকে মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি কেজিতে ১২০ মিঃ গ্রাঃ পিজি দিয়েও ডিম সংগ্রহ করা যায়। আর সে জন্য মাছের ইঞ্জেকশনের মাত্রার চেয়ে মাছের পরিপক্কতার উপর বেশি নজর দিতে হবে। এখানে আমার মত হল- যেহেতু শুধু ১৫/২০ মিঃ গ্রাঃ/কেজি পিজি দিয়ে মাগুর মাছ ভাল ডিম দেয় সেখানে ১২০ মিঃ গ্রাঃ পিজি দেয়ার কোনো অবস্থাতেই উচিৎ নয়। কেননা আমি দেখেছি যে মাছের পিজির মাত্রা বেশি হলে রেনু ভাল হয় না, আবার রেনু হলেও সেই রেনুর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা থাকে না। যে কারণে রেনু উৎপাদন করলেও পরবর্তীতে ব্যাপকভাবে পোনা উৎপাদন করা যায় না। এ গেল পিজি দ্রবনের কথা। এইচ.সি.জি. দিয়েও মাগুরের ইঞ্জেকশন করা যায়।
ইঞ্জেকশনের মাত্রা :
আগেই উল্লেখ করেছি যে, পিজি দিয়ে ২টি পদ্ধতিতে ডোজ দেয়া যায়। একটি একক মাত্রা বা একটি মাত্র ডোজ আর অন্যটি ২টি ডোজ। আমার মতে ২টি ডোজের মাধ্যমে দেশি মাগুরের ডিম সংগ্রহ করা হলে সবচেয়ে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে প্রথম ডোজ হবে ৫ মিঃ গ্রাঃ/কেজি। প্রথম ডোজের ৭/৮ ঘণ্টা পর ২য় ডোজ দিতে হবে প্রতি কেজিতে ১৫ মিঃ গ্রাঃ/কেজি। ইঞ্জেকশন দিতে হবে প্রজনন অঙ্গ বরাবর উপরের মাংশল স্থানে। সাধারণত ২য় ডোজের ২০/২৪ ঘণ্টা পর দেশি মাগুর মাছের ডিম সংগ্রহের সময় হয়ে থাকে।
ডিম সংগ্রহ পদ্ধতি :
চাপ প্রয়োগে মাগুর মাছের ডিম সংগ্রহ করতে হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে এখন পর্যš- এই মাছের প্রজনন করানো সম্ভব হয়নি। অন্যান্য মাছ যেখানে ডিম পাড়ার সময় হলে আপনা-আপনি ডিম বের হতে থাকে সেখানে মাগুর মাছের ডিম সহজে বের হতে চায় না। আর সে জন্য মাগুর মাছের ডিম বের করার সময় কার্প জাতীয় মাছের চেয়ে পেটে একটু বেশি চাপ প্রয়োগ করতে হবে। বেশি জোড়ে চাপ প্রয়োগের ফলে ডিম যেন ফেটে না যায় সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তা না হলে তাতে সমস্ত পরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে। ২টি পদ্ধতিতে ডিম সংগ্রহ করে স্পার্ম মেশানো যায়। উভয় পদ্ধতিতেই পুরুষ মাগুর মাছের টেস্টিজ বা অণ্ডকোষ কেটে স্পার্ম বের করে পাখির পালক দিয়ে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রথমে স্ত্রী মাগুরের পেটে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ডিম সংগ্রহ করতে হবে এবং অন্যদিকে একই সময়ে ২/৩ জনে ভাগে ভাগে মিলে অণ্ডকোষ কেটে স্পার্ম বের করতে হবে। কারণ আগে ডিম সংগ্রহ করে তারপর স্পার্ম সংগ্রহ করলে এতে সময় বেশি লাগে এবং তাতে পরে স্পার্ম মেশালে ডিমের উর্বতার হার কম হয়, এমনকি কোন কোন সময়ে ডিম ফার্টিলাইজ হয় না। এখানে ১ থেকে ১.৫ মিনিটের মধ্যেই এই কাজটি শেষ করতে হবে। এই কাজটি করার সময় ডিম সংগ্রহের জন্য ২/৩ জন আবার স্পার্ম সংগ্রহের জন্য ২/৩ জন এভাবে ২টি দলের একে অপরের সাথে সমন্বয় রাখতে হবে। যেমন চাপ প্রয়োগের সময় একজনে মাছ ধরে দিতে হবে। আরেকজন চাপ দিয়ে ডিম বের করতে হবে। অন্য দিকে একই সময়ে একজন পুরুষ মাছের পেট কেটে টেস্টিজ বের করে তারপর কাটতে হবে এবং টেস্টিজ থেকে স্পার্ম বের করে তাতে কয়েক ফোঁটা বিশুদ্ধ পানি মিশিয়ে তখনি ডিমের সাথে মেশাতে হবে। বিশুদ্ধ পরিষ্কার পানিতে .৯% লবণ মিশিয়ে তাতে স্পার্ম মিশিয়ে পরে ধীরে ধীরে ডিম সংগ্রহ করে তাতে মিশিয়ে নিলেও চলে। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে ২টি পদ্ধতির মধ্যে ১ম পদ্ধতিটি বেশি কার্যকর মনে হয়েছে। দেশি মাগুর একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সুস্বাদু মাছ। রোগীর পথ্য হিসাবে মাছটির চাহিদা রয়েছে অনেক। এক সময় এই মাছটিকে সহজেই প্রাকৃতিক জলাশয়ে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন দেশি মাগুর আর তেমন পাওয়া যায় না। তাই মাছটি প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল। তবে আশার কথা হল দেশের মাছ চাষিরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এই মাছটিকে ফিরিয়ে এনেছে।
ডিম সংগ্রহের পরবর্তী ব্যবস্থাপনা :
ডিম সংগ্রহের পর ডিমগুলোকে সিস্টার্নে নিয়ে যেতে হবে। সিস্টার্নের আকার আয়তকার হতে হবে। দৈর্ঘ্যে ৮ ফুট এবং প্রস্থে ৪ ফুট হলে ভাল। সিস্টার্নের পানির উচ্চতা ৩ ইঞ্চির বেশি দেয়া উচিৎ নয়। ডিমগুলোকে পাখির পালক দিয়ে আস্তে আস্তে সিস্টার্নে বিছিয়ে দিতে হবে। মাগুরের ডিম আঠালো আর সেজন্য ডিমগুলোকে এমনভাবে বিছাতে হবে যেন একটি ডিম আরেকটি ডিমের সাথে লেগে না যায়। তারপর আধা ইঞ্চি পি.ভি.সি. পাইপ ছিদ্র করে পানির ঝর্ণার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দেশি মাগুরের ডিম ফুটতে কার্প জাতীয় মাছের চেয়ে সময় বেশি লাগে। তাপমাত্রা ভেদে ৩০ থেকে ৩৬ ঘণ্টা সময় লাগে। এই র্দীঘ সময়ে মাগুর মাছের ডিমে ফাঙ্গাস আক্রমণ করতে পারে। ডিমে ফাঙ্গাস আক্রমণ করার সাথে সাথে ওই ডিমগুলোকে সিস্টার্ন থেকে সাইফনের মাধ্যমে ফেলে দিতে হবে। অন্যথায় অত্যন্ত- দ্রুত গতিতে এই ফাঙ্গাস এক ডিম হতে অন্য ডিমে ছড়িয়ে গিয়ে সমস্ত ডিমকে নষ্ট করে ফেলতে পারে। সেজন্য ডিমগুলোকে সিস্টার্নে ঘন করে দেয়া যাবে না। যথাসম্ভব পাতলা করে দিতে হবে। এই সময় ঠাণ্ডা পানির ঝর্ণার সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা রাখতে হবে। পানির তাপমাত্রা ২৭/২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট রাখতে হবে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে পানির তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি হলে দেশি মাগুরের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়েও পরে বাচ্চা মারা যায়। এভাবে ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পর বাচ্চাগুলো আপনা আপনি সিস্টার্নের কোণায় যেতে থাকবে। সিস্টার্নের কোণায় অবস্থান নিলেই সাধারণত বাচ্চার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়ে যায়। বাচ্চাগুলো কোণায় অবস্থান নিলে সিস্টার্নের মাঝখানের ময়লা, ধূলাবালি সাইফনের মাধ্যমে পরিষ্কার করে দিতে হবে। এভাবে বাচ্চার বয়স ৭২ ঘণ্টা পার হলেই এদেরকে কৃত্রিম খাবার দিতে হবে। এই সময় খাবার হিসাবে ছোট জু-প্যাংকটন জীবিত অবস্থায় সিস্টার্নে দিতে হবে। এই জু-প্যাংকটন পুকুর থেকে জীবিত অবস্থায় ধরে সংগ্রহ করে তারপর সিস্টার্নে দিতে হবে। সিস্টার্নে দু’দিন এই খাবার খাওয়ানোর পর নার্সারি পুকুরে স্থানান্তর করতে হবে।
১. দেশি মাগুরের ব্রুডমাছ অবশ্যই পরিপক্ক হতে হবে। অন্যথায় সমস্ত কাজই বিফলে যাবে।
২. চাপ প্রয়োগে ডিম সংগ্রহের সময় খুব বেশি চাপ দিয়ে ডিম বের করা উচিৎ নয়। তাতে ডিম ভেঙ্গে যেতে পারে।
৩. সিস্টার্নে ডিম যেন অধিক ঘনত্বে দেয়া না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ একটি ডিম আরেকটি ডিমের সাথে যেন লেগে না যায়।
৪. সিস্টার্নের ঠাণ্ডা পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। পানির তাপমাত্রা ২৭/২৮ ডিগ্রির বেশি হলে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলেও মারা যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। এভাবে চাহিদা অনুযায়ী যে কেউ দেশি মাগুরের রেনু উৎপাদন করতে পারেন।
দেশি মাগুর মাছ খেতে অনেক সুস্বাদু। কিন্তু বাজার তেমন পরিমানে মাগুর মাছ পাওয়া যায় না । যা কিছু পাওয়া যায়্ তা আবার সাধারন ক্রতার নাগারের বাহিরে । এক কেজি মাগুর মাছের দাম ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা । যে সব চাষী ভাইরা দেশী মাগুর মাছ চাষ করবেন ভাবছেন অথছ ভাল মানের দেশী মাগুর মাছের পোনা পাচ্ছেন না তারা নিচে সাইট টা দেথতে পারেন fishmarketbd.com
ReplyDelete